BREAKING NEWS

Entertainment

Technology

Travelling

Wednesday 18 December 2019

শিক্ষক দিবস পালনের বক্তব্য


শুভ সকাল! শিক্ষক দিবস পালনের এই শুভক্ষণে, বক্তব্যের প্রথমেই আমার প্রিয় শিক্ষক/শিক্ষিকা, সম্মানীয় অথিতিবর্গ এবং সহপাঠীদের জানাই শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। পাশাপাশি আমাকে মঞ্চে ডেকে নেওয়ার জন্য সঞ্চালক মহাশয়কে জানাই ধন্যবাদ আর যাঁর কথা না বললেই নয়, সেই মহান দার্শনিক, আদর্শবান বিচারক, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, অধ্যাপক সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিনে তাঁর প্রতি জানাই বিনম্ভ্র শ্রদ্ধা।
আমরা প্রত্যেকেই জানি আজ শিক্ষক দিবস । আর আজ, সারা বছর শিক্ষাগৃহে শিক্ষালাভের পর সেই সব সম্মানীয় শিক্ষক/শিক্ষিকাদের প্রতি  শ্রদ্ধা ঞ্জাপণের দিন । জাপানি ভাষায় একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে, 'Better than a thousand days of diligent study is one day with a great teacher' অর্থাৎ হাজারো বছরের কঠোর পরিশ্রম করে পড়ার চেয়ে এক মহান শিক্ষকের সাথে কাটানো একটি দিন অতি উত্তম। সত্যি তাই ।

যদিও বলা হয়ে থাকে বাবা মা'ই হলেন Friend, Philosopher, Guide তারপরেও শিক্ষকদের ভূমিকা কম থাকে না। শিক্ষকদের গুরুত্ব বোঝাতে গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টোটাল বলেছেন, 'যাঁরা শিশুদের শিক্ষাদানে ব্রতী তাঁরা অবিভাবকদের থেকেও অধিক সম্মানীয়। পিতামাতা আমাদের জীবন দান করেন ঠিকই। কিন্তু শিক্ষকরা, সেই জীবনকে সুন্দর ভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেন।'
বিশ্বের অধিকাংশ দেশে শিক্ষক দিবস পালন করা হয় ৫ই অক্টোবরে। কিন্তু আমাদের দেশে পালন করা হয় আজকের দিনে অর্থাৎ ৫ই সেপ্টেম্বারে। কেন আজকের দিনে পালন করা হয় সে বিষয়ে কম বেশি সকলেরই জানা। তারপরেও বলি, আজ মহান শিক্ষক সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিন। তামিল নাড়ুর একগ্রামে জন্মগ্রহন করা এই মহান মানুষ যদিও পরবর্তী দেশের তৎকালীন রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে দেশের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন তারপরেও তিনি কিন্তু নিজেকে 'শিক্ষক' হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি পছন্দ করতেন। একবার তাঁর সহকর্মী অধ্যাপকরা এবং অনুরাগী শিক্ষার্থীরা তাঁর জন্মদিবস পালন করতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমার জন্মদিবস পৃথক ভাবে পালন না করে, আমি গর্বিত হব, দিনটি যদি দেশের সমস্ত শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে পালন করা হয়।'  আর সেই সময় থেকেই অর্থাৎ ১৯৬২ সালের ৫ই সেপ্টেম্বার থেকেই আমাদের দেশে চলে আসছে শিক্ষক দিবস পালনের রীতি। আর আমরাও পারছি আমাদের নৈতিকতা বিকাশের কারিগরদের প্রতি আমাদের বিনম্ভ্র শ্রদ্ধা জানাতে।
যদিও আমি যে কথা গুলো এখন বলব সেগুলো বলাবাহল্য, তারপরেও আমি দু-এক কথা বলতে চাই বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে। খুব সগর্বে প্রায়ই উচ্চারণ করা  হয়ে থাকে, 'শিক্ষা আনে চেতনা, চেতনা আনে বিপ্লব, বিপ্লব আনে মুক্তি।' কিন্তু বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার অধিক বানিজ্যিক করণে বোধহয়, জাতির মেরুদন্ড হিসেবে পরিচিত শিক্ষা এবং শিক্ষক, দুটোই পণ্যে পরিণত হয়েছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, 'চেতনা-বিপ্লব-মুক্তি' শব্দ গুলো শুধুই অভিধানের পাতায় ঘোরাফেরা করছে আর হারিয়ে ফেলেছে তাদের বাস্তব অস্থিত্ব। এই অস্থিত্ত্ব ফিরিয়ে এনে দিতে পারেন একমাত্র শিক্ষরাই কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল যে শিক্ষা ব্যবস্থা এখন এতটাই পণ্য দ্রব্যে পরিনত হয়েছে তা ফিরিয়ে আনা দুষ্কর। এ বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ তাঁর শিক্ষা বিষায়ক প্রবন্ধগুলোর এক জায়গায় খুব সুন্দর বর্ণনা করেছেন । তিনি বলেছেন, 'শিক্ষক দোকানদার, বিদ্যাদান তাঁহার ব্যবসায়। তিনি খরিদ্দারের সন্ধানে ফেরেন । ব্যবসাদারের কাছে লোকে বস্তু কিনিতে পারে কিন্তু তাহার পণ্য তালিকার মধ্যে শ্রদ্ধা, নিষ্ঠা প্রভৃতি হৃদয়ের সামগ্রী থাকিবে এমন কেহ প্রত্যাশা করিতে পারে না। এই প্রত্যাশা অনুসারেই শিক্ষক বেতন গ্রহন কলেন এবং বিদ্যাবস্তু বিক্রয় করেন--এই খানে ছাত্রের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক শেষ।'

আর এমন ধারা চলতে থাকলেই ঘোর বিপদ। স্বাধীনতার ৭০বছর পরেও নেতাজী, স্বামীজী, গান্ধীজীদের দেশ থেকে অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুসংস্কার ভেদাভেদ দূর করা অসম্ভব।
অন্যদিকে শিক্ষা ব্যবস্থার মূল কাঁচামাল শিক্ষার্থীদেরও থাকে অপরিসীম দায়িত্ব। কুমোর যতই দক্ষ হোক না কেন মাটি যদি ঠিক না থাকে তবে তার বয়ন শিল্পও বৃথা। তাই শিক্ষার্থীদের উচিৎ সমানভাবে শিক্ষকদের সহযোগীতা করে শিক্ষা ক্ষেত্রকে পাঠ উপযোগী করে তোলা। কিন্তু Whatsapp, Facebook, Twitter কিংবা Reliance  Jio'র মত গড্ডালিকা প্রবাহময় জগতে সে সব সুযোগ কোথায় ? ফলে দেখা যাচ্ছে, প্রায়ই কোথাও না কোথাও শিক্ষক-শিক্ষার্থী বসচা, বিদ্যালয় ঘেরাও। এমনকী কয়েক বছর আগে উত্তর দিনাজপুরের এক কলেজের পড়ুয়াদের দেখা গিয়েছিল চুড়ান্ত পরীক্ষায় নকল না করতে দেওয়ার জন্য জাতীয় সকড় অবরোধ করতে । এসব ঘটনা সত্যিই ঘৃণ্য ও  ধিক্কার জনক।
আর তাই আমার বক্তব্য শেষ করতে করতে আর একবার বলব, আমাদের দেশের উন্নয়নের স্বার্থে শিক্ষা ব্যবস্থাকে সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে শিক্ষক/শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থী উভয় কুলকেই এগিয়ে আসতে হবে । যাতে করে নৈতিক শিক্ষার পরম স্পর্শে সমাজ হয়ে ওঠে নির্মল-প্রাণবন্ত।  আর দানা মাঝি, দশরথ মাঝিদের মত প্রান্তিক মানুষ জনেরা মন খুলে হেসে বলতে পারে, 'আমরা ভালো আছি।'

আমার বক্তব্য শেষ করব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতা দিয়ে, -

ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা
ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ,
আধ মরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা
রক্ত আলোর মদে মাতাল ভোরে
আজকে যে যা বলে বলুক তোরে
সকল তর্ক হেলায় তুচ্ছ করে
পুচ্ছটি তোর উচ্ছে তুলে নাচা
ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা
ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ
আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।


ধন্যবাদ 
 
Copyright © 2014 EnglisH AddA. Designed by OddThemes